ক্রিপ্টোগ্রাফি কী এবং এর ভূমিকা

ক্রিপ্টোগ্রাফি কী?

ক্রিপ্টোগ্রাফি হলো গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি প্রযুক্তি যা তথ্য বা ডেটাকে এনক্রিপ্ট করে। এটি গাণিতিক অ্যালগরিদম এবং ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী ব্যবহার করে ডেটা এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করে। ক্রিপ্টোগ্রাফির মূল লক্ষ্য হলো ডেটা নিরাপদ রাখা এবং নিশ্চিত করা যে শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিরাই সেই ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারবে।

ক্রিপ্টোগ্রাফি সাধারণত ব্লকচেইনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয় তথ্যের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা, এবং প্রাইভেসি নিশ্চিত করতে।

ব্লকচেইনে ক্রিপ্টোগ্রাফির ভূমিকা

ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে ক্রিপ্টোগ্রাফি একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে। ব্লকচেইনের নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ক্রিপ্টোগ্রাফির বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ব্লকচেইনে ক্রিপ্টোগ্রাফি প্রধানত নিম্নলিখিত কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:

১. হ্যাশিং (Hashing):

  • হ্যাশ ফাংশন ব্লকচেইনে ডেটাকে এনক্রিপ্ট করে একটি নির্দিষ্ট আকারের আউটপুট তৈরি করে, যা হ্যাশ নামে পরিচিত।
  • প্রতিটি ব্লক একটি হ্যাশ ধারণ করে যা আগের ব্লকের সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি ব্লকচেইনে একে অপরের সাথে ব্লকগুলোকে সংযুক্ত এবং নিরাপদ রাখে।
  • হ্যাশ ফাংশন ব্লকের তথ্য পরিবর্তন প্রতিরোধ করে, কারণ যদি একটি ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সেই ব্লকের এবং পরবর্তী ব্লকের হ্যাশও পরিবর্তন হবে, যা ব্লকচেইনে অসঙ্গতি তৈরি করবে।

২. ডিজিটাল স্বাক্ষর (Digital Signature):

  • ব্লকচেইনে প্রতিটি লেনদেন ডিজিটাল স্বাক্ষর দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।
  • ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্লকচেইনের প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর পাবলিক এবং প্রাইভেট কী ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। প্রাইভেট কী ব্যবহার করে ব্যবহারকারী তার লেনদেন এনক্রিপ্ট করে এবং পাবলিক কী ব্যবহার করে অন্যান্য নোড বা ব্যবহারকারীরা সেই লেনদেন যাচাই করে।
  • এটি নিশ্চিত করে যে লেনদেন কেবলমাত্র আসল প্রেরকই শুরু করেছে এবং কোন পরিবর্তন ছাড়াই ব্লকচেইনে রেকর্ড করা হয়েছে।

৩. পাবলিক এবং প্রাইভেট কী (Public and Private Keys):

  • ব্লকচেইনে প্রতিটি ব্যবহারকারী একটি পাবলিক কী এবং একটি প্রাইভেট কী ব্যবহার করে। প্রাইভেট কী গোপন থাকে এবং এটি ব্যবহারকারীর তথ্য ও লেনদেনের এনক্রিপশন ও ডিজিটাল স্বাক্ষরের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • পাবলিক কী প্রকাশিত থাকে এবং এটি লেনদেনের ভেরিফিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • এই কী পেয়ার নিশ্চিত করে যে লেনদেনের তথ্য নিরাপদ এবং ব্যবহারকারীর অনুমোদন ব্যতীত এটি অ্যাক্সেস করা যাবে না।

ব্লকচেইনে ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার

  • লেনদেনের নিরাপত্তা: ব্লকচেইনে প্রতিটি লেনদেন ডিজিটাল স্বাক্ষর এবং হ্যাশিংয়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে, যা নিশ্চিত করে যে ডেটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
  • ডেটা ইন্টিগ্রিটি এবং ইমিউটেবিলিটি: হ্যাশ ফাংশন এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে ব্লকচেইন লেনদেনগুলো অক্ষত রাখে। ব্লকের কোনো পরিবর্তন করলে হ্যাশ ফাংশন তাত্ক্ষণিকভাবে তা শনাক্ত করে।
  • ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নিশ্চিত করা: পাবলিক এবং প্রাইভেট কী ব্যবহার করে ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা এবং তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
  • কনসেনসাস মেকানিজম: ব্লকচেইনের বিভিন্ন কনসেনসাস মেকানিজম (যেমন প্রুফ অব ওয়ার্ক বা প্রুফ অব স্টেক) ক্রিপ্টোগ্রাফির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে, যা ব্লকচেইনে ব্লক যোগ করার প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত করে।

ব্লকচেইন শেখার ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোগ্রাফির গুরুত্ব

ব্লকচেইন প্রযুক্তি শিখতে হলে ক্রিপ্টোগ্রাফির মৌলিক ধারণা এবং পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ব্লকচেইন সিস্টেমের প্রতিটি স্তরেই ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার হয়—থেকে থাকে লেনদেন সুরক্ষা থেকে শুরু করে নেটওয়ার্কে ব্লক যোগ করা পর্যন্ত।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion